Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

Title
New coronavirus (Quid-1)
Details

নতুন করোনাভাইরাসকে (কভিড-১৯) বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১২১টি দেশ ও অঞ্চলে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পর গতকাল বুধবার জেনেভায় নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিল সংস্থাটি।

এদিকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন তিনজনের মধ্যে দুজন সুস্থ হয়ে উঠছেন বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআর জানায়, পর পর দুটি পরীক্ষায় কভিড-১৯ পাওয়া না গেলে তাঁদের পুরোপুরি সুস্থ বলে গণ্য করা হবে এবং তাঁরা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবেন। পাশাপাশি তাঁদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরা কোয়ারেন্টাইনে ভালো আছেন। এ ছাড়া এ পর্যন্ত মোট ১৪৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা

জেনেভায় সংবাদ সম্মেলনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরে ডাব্লিউএইচওর মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গ্রেব্রিয়েসিস বলেন, গত দুই সপ্তাহে চীনের বাইরে সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা ১৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সংক্রমণের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে তাঁরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছিলেন। ভাইরাসটি নিয়ে ‘ভীতিকর নিষ্ক্রিয়তা’ দেখে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মহামারির চেহারা নিয়েছে বলে ঘোষণা করেন তিনি। 

সাধারণত কোনো ছোঁয়াচে রোগ মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের মাধ্যমে পৃথিবীর বহু অংশে ছড়িয়ে পড়লে তাকে বৈশ্বিক মহামারি বলা হয়। ডাব্লিউএইচওর প্রধান বলেন, ‘করোনাভাইরাস যেভাবে যে হারে ছড়াচ্ছে, তাতে আমরা ভীষণ উদ্বিগ্ন।’ তিনি এ-ও বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবকে মহামারি বলা হলেও এ ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য ডাব্লিউএইচওর যে নির্দেশিকা তাতে কোনো পরিবর্তন হবে না।

সংক্রমণ প্রতিরোধে যথেষ্ট পদক্ষেপ না দেখে সংবাদ সম্মেলনে উদ্বেগও প্রকাশ করতে দেখা যায় টেড্রোসকে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই দেশগুলোকে বলে আসছি, ব্যবস্থা নিন জরুরি ভিত্তিতে, দ্রুত। আমরা সব সময়ই ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে আসছি।’ জরুরি ও আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিয়ে এ সংক্রমণের গতিপথ বদলে দিতে সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ডাব্লিউএইচওর প্রধান বলেন, এই ভাইরাস দমন ও নিয়ন্ত্রণ যে করা সম্ভব, তা ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি দেশ দেখিয়েছে। যেসব দেশে বৃহৎ কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে, তা মোকাবেলা করা সংশ্লিষ্ট দেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। 

গত ডিসেম্বরে চীনের উহানের একটি সি-ফুড মার্কেট থেকে করোনাভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে বলে মনে করা হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে অবরুদ্ধ করা হয় উহানসহ বেশ কয়েকটি শহর। এরই মধ্যে অন্য দেশগুলোতে করোনা শনাক্তের খবর বেরোতে থাকে। একপর্যায়ে এ ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করে ডাব্লিউএইচও। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে এসে বহির্বিশ্বে করোনা ছড়াতে থাকে দ্রুতগতিতে। কার্যকর কোনো প্রতিষেধক উদ্ভাবিত না হওয়ায় ভাইরাসটি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকেণ্ঠা বিশ্বজুড়েই বিরাজমান।

সম্প্রতি ভাইরাসটির উৎসস্থল চীনের পরিস্থিতি বেশ উন্নতি হয়েছে। একই সময়ে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে এর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। বিশেষ করে ইতালি, ইরান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্রে বেড়েই চলেছে এর প্রাদুর্ভাব। গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা নাগাদ ১২১টি দেশ ও অঞ্চলে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার খবর জানিয়েছে পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটার। এ পর্যন্ত বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার ৯১০-তে। মারা গেছে চার হাজার ৫৮৫ জন। এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী সম্প্রতি করোনায় বৈশ্বিক মৃতের হার কিছুটা বেড়েছে। সপ্তাহখানেক আগে এই হার ছিল ৩.৪ শতাংশ। এখন তা ৩.৬৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত আক্রান্ত ও মৃত্যুর যত ঘটনা ঘটেছে, তার অধিকাংশই ঘটেছে চীনে। সেখানে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের অধিকাংশের বয়স ছিল ৭০ বছরের বেশি; পাশাপাশি তাঁদের অন্য অসুখও ছিল। অন্য দেশগুলোতেও বয়স্করাই বেশি মারা গেছেন।

বাংলাদেশে আক্রান্ত তিনজনের দুজনই সুস্থ

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে আইইডিসিআরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, দেশে নতুন করে কারো মধ্যে কভিড-১৯ ধরা পড়েনি।

তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের একটু ভালো খবরই দিতে পারব। গতকাল আমরা যে পরীক্ষা করেছি তাতে তিনজনের মধ্যে দুজনের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। আপনারা জানেন যে পর পর দুবার নেগেটিভ এলে আমরা তাদের ডিসচার্জ করে দিতে পারি। তো তিনজনের মধ্যে দুজন অলরেডি নেগেটিভ। আমরা আগেও বলেছি, শারীরিকভাবে তাদের মধ্যে কোনো সমস্যা ছিল না। তারা সুস্থ আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে প্রটোকল, সে অনুযায়ী আমরা তাদের রিলিজ করে দেব। তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরাও কোয়ারেন্টাইনে ভালো আছে।’

অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে আটজনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ১৪৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা করা হয়েছে ১০ জনের নমুনা।

কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা ও সহযোগিতার পদ্ধতি নিয়ে গতকাল বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়েছে। আইইডিসিআর পরিচালকের কার্যালয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডা. বর্ধন জং রানা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ডা. খলিলুর রহমান, আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ড. ফ্লোরাসহ অন্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এ সময় কভিড-১৯ সংক্রমণের বর্তমান পর্যায়ে বিদেশি নাগরিকদের ট্রাভেল অ্যাডভাইজরি, অন অ্যারাভাইল ভিসা বিষয়েও আলোচনা হয়।

এদিকে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে স্বাস্থ্যসেবা মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত ন্যাশনাল টেকনিক্যাল কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় জানানো হয়, বিভিন্ন বন্দরে ১০টি থার্মাল স্ক্যানার বসানো হবে। ইতিমধ্যেই সরকার পাঁচটি স্ক্যানার ক্রয় করেছে। এ ছাড়া সামিট গ্রুপ পাঁচটি স্ক্যানার দিচ্ছে সরকারকে।

সাংবাদিকদের নিয়মিত অবহিতকরণের অংশ হিসেবে গতকাল আইইডিসিআর মিলনায়তনে কভিড-১৯ সংক্রমণের নানা দিক, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিস্থিতি তুলে ধরেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। কভিড-১৯ আক্রান্ত সন্দেহে থাকা ব্যক্তিদের জন্য বলা হয়, যেসব দেশে কভিড-১৯-এর স্থানীয় সংক্রমণ ঘটেছে সেসব দেশ থেকে যেসব যাত্রী আসবে তাদের ১৪ দিন স্বেচ্ছা ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’-এ থাকতে হবে। তাদের কারো মধ্যে যদি কভিড-১৯-এর লক্ষণ দেখা যায় তবে অন্য কোথাও না গিয়ে প্রথমেই আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগ করতে হবে।

এদিকে দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে স্বাস্থ্যসেবা খাতে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে এ বরাদ্দ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।

Images
Attachments
Publish Date
12/03/2020
Archieve Date
30/03/2020